মঠবাড়িয়ার মিরুখালী ইউনিয়নে প্রায় দুইশত বছরের প্রাচীন পুরাকীর্তির (কুলু বাড়ি) মূল স্থাপনাটি বুধবার (১৮ আগস্ট) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতল ভবনের সম্মুখ অংশ বিকট শব্দে ধসে বিধ্বস্ত হয়। প্রাচীন এ জমিদারি আমলের পরিত্যক্ত ঐ ভবনে কেউ বসবাস না করায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। বাড়ির অন্য সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বংশানুক্রমিক কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরুখালীর কুলু বাড়ির (বর্তমান রায় বাড়ি) মূল ভবন, গেট, মন্দির ও মঠ। এখানের মূল অট্টালিকা দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পরিত্যক্ত থাকায় বর্ষা মৌসুমে মূল ভবনটি নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে বুধবার গভীর রাতে প্রাচীন ভবনের সামনের অংশ বিধ্বস্ত হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
এখানে রয়েছে নান্দনিক নির্মাণ শৈলী আর দৃষ্টি নন্দন কারুকার্য খচিত অতি পুরাতন তিনটি বিশালাকৃতির অট্টালিকা। একটি দারুণ নকশা খচিত দুর্গা মন্দির ও বেশ কিছু মঠ। প্রাচীনকাল থেকে এ বাড়িকে ঘিরে মেলাসহ নানা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতো। এখনও প্রতিবছর এখানে দুর্গা উৎসব, কালী পূজা ও বাৎসরিক কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগের মতো অনুষ্ঠানে এখন আর সে প্রাণ নেই।
জনশ্রুতি আছে, আজ থেকে প্রায় ২শ বছর আগে বরিশাল জেলা থেকে বৃন্দাবন চন্দ্র কুলু এখানে আসেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে। তখন থেকেই তাদের গোড়াপত্তন হয় এখানে। বৃন্দাবনের তিন ছেলে পূর্ণ চন্দ্র রায়, মহেশ চন্দ্র রায়, গুরু চরণ রায় এর মধ্যে বড় ছেলে পূর্ণ চন্দ্র রায় তখনকার জমিদারদের নিকট থেকে এ এলাকার জমিদারির সুযোগ লাভ করে। মিরুখালী বাজার স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজে জমিদান এ বংশের একটি স্বীকৃত ইতিহাস। কুলু বংশের নানা জনসেবা মূলক কর্মকাণ্ড এখনও দৃশ্যমান আছে। কথিত আছে কিংবদন্তী এ বাড়ির মাটির নীচে মাটির কলসি ভর্তি প্রচুর স্বর্ণ মুদ্রা আর নানা দামি অলঙ্কার গচ্ছিত ছিল। ওই সব ধন সম্পদের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও কালের স্থাপনাগুলো এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন নিদর্শন হলেও নানা সঙ্কটে বংশ পরম্পরায় এসব স্থাপনা সংস্কার ও সুরক্ষার তেমন উদ্যোগ নেই।
মিরুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফ খান বলেন, মিরুখালীর কুলুবাড়ির প্রাচীন স্থাপনাগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
মিরুখালীর কুলু বাড়ির কিছু ছবি ও ভিডিও নিচে দেয়া হলো।