বেটা ভার্সন

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

অর্ধেক ভাড়া চালু করার পক্ষে নন পরিবহন মালিকরা

আরও পড়ুন

গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া (হাফ পাস) চালু করার পক্ষে নন পরিবহন মালিকরা। তবে বিআরটিএ বলছে, হাফ পাসের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা হতে পারে। তবে এটা সময়সাপেক্ষ।

হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলন এবারই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের অন্যতম চাওয়া ছিল ‘হাফ পাস’ ব্যবস্থা। ওই সময় আন্দোলনের মুখে অনেকটা তড়িঘড়ি করে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করা হলেও তাতে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সম্প্রতি ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আরেক দফা বাসের ভাড়া বাড়ানো হলে শিক্ষার্থীরা আবারও হাফ পাসের দাবিতে রাস্তায় নামেন।

সড়ক পরিবহন আইনে কেন শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি নেই জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইনটি তড়িঘড়ি করে পাস করা হয়নি। কোনো আইনই দ্রুত করা যায় না। হাফ পাসের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে। তাই কবে হাফ পাস চালু হতে পারে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা সময়সাপেক্ষ।’ তিনি বলেন, ‘তবে বিআরটিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা যেন শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নিশ্চিত করেন সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিআরটিসি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি দিয়ে বাস চালাচ্ছে।’

তবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিআরটিসি একটি করপোরেশন। নিজের আয়ে প্রতিষ্ঠানটি চলে। তবে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিআরটিসিতে হাফ পাস চালু করব।’

বেসরকারি পরিবহনগুলোর সিদ্ধান্ত জানার জন্য ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাফ পাস দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকার বাস মালিকরা এত বড়লোক হন নাই। প্রতিদিন ঢাকায় লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী চলাচল করে। এদের সবাইকে হাফ ভাড়ায় নিতে হলে সরকার থেকে ভর্তুকি দিতে হবে।’

এর আগে শিক্ষর্থীদের হাফ ভাড়ার প্রচলন কিভাবে ছিল জানতে চাইলে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘কখনো হাফ ভাড়ার প্রচলন ছিল না। অল্প পথে ছাত্ররা ভাড়া কম দিত, সেটা মেনে নেওয়া হতো। কিন্তু কাগজে-কলমে কখনো হাফ ভাড়া রাখা হতো না।’ পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিকদের কেন হাফ পাস দেওয়া হয়—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাঁদের কাউকে হাফ পাস দেওয়া হয় না।’

আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘হাফ পাস আমাদের হাতে নেই। এটা সরকার ঠিক করবে। আমরা তো আর নিজে থেকে হাফ পাস দিব না।’ তিনি দাবি করেন, দেশে আগে কখনো হাফ পাস ছিল না। কোনো কোনো ছাত্র দুই-এক কিলোমিটার পথ গেলে ভাড়া একটু কম দিত।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মেহেদি দীপ্ত বলেন, ‘হাফ পাস নিশ্চিত করতেই হবে। সরকার থেকে হাফ ভাড়া নিয়ে পরিষ্কার ঘোষণা আসা উচিত। প্রতিদিনই পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে আমাদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। একদিকে বলছে আলোচলা করে এটার সমাধান দিবে। অন্যদিকে তারা আমাদের বাসে উঠতে দেয় না। ছাত্রীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে। এভাবে চলতে পারে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন কয়েকবার। বিআরটিসির কার্যালয়ে ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা খন্দকার এনায়েত উল্যাহকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘এই নির্দেশনা শুধু বিআরটিসির জন্য ছিল। আমাদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আলোচনা করেনি। বিআরটিসি নিজেই হাফ ভাড়া নিচ্ছে না। আমাদের পক্ষে তো সম্ভবই না।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হাফ ভাড়া ঠিক করার জন্য একটি কমিটি করার কথা ছিল। তা হয়নি। হাফ ভাড়া ছাত্রদের অধিকার। তিনি বলেন, ‘একটা বাসে ৩০ শতাংশ সিট খালি থাকবে, এমনটা ধরে ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। ফলে খালি আসনের ভাড়াও অন্য যাত্রীদের কাছ থেকেই নেওয়া হয়। তাহলে ছাত্রদের হাফ ভাড়া দিতে সমস্যা কোথায়।’

সংবাদ বিভাগ
- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ নিবন্ধ