আজ ২৪ নভেম্বর, বরগুনা জেলার বামনা হানাদার মুক্ত দিবস।
১৯৭১ সালের এ দিন কুয়াশাছন্ন ভোররাতে বামনা থানা ভবন আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক গ্রেনেড আর বুলেটের আঘাতে প্রকম্পিত হয় থানা ভবনের প্রতিটি প্রান্ত। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা। বামনা থানার পতাকাদণ্ডে ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। ভোরের সূর্য উদীত হওয়ার পূর্বেই বামনা থানা হয় হানাদারমুক্ত।
জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্যে নবম সেক্টরের সাব সেক্টর হেটকোয়ার্টার বুকাবুনিয়ায় তৎকালীন ক্যাপটেন মেহেদী আলী ইমাম ও উপ-অধিনায়ক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের এ দিনে বামনায় সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসিকতা এখানে অবস্থানরত পাক বাহিনীকে পরাজিত করে।
কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ সকাল নয়টায় বুকাবুনিয়া ইউনিয়ন থেকে পূর্ব দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পায়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা বামনা আমুয়ার খালের রাস্তার পশ্চিম ঢালে ও স্থানীয় আমজাদ খান সাহেবের বাড়ির পিছনের বাগানে অবস্থান নেয়। এদিকে বিষখালী নদী তীরবর্তী বদনীখালী বাজার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ও লুটপাট করে পাকিস্তানি সৈন্য বহনকারী লঞ্চ এমভি “আল আকরাম” বামনা বন্দরের দিকে আসতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থান নিয়ে ফায়ার শুরু করেন। পাক সেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। এমন অবস্থার মধ্যে পাক সেনারা টিকতে না পারায় লঞ্চের গতি পিছনে নিয়ে লঞ্চ ঘুরিয়ে বেতাগীর উপজেলার দিকে পিছু হটে চলে যায়।
পরদিন ২৪ নভেম্বর ভোর রাতে মুক্তিকামী যোদ্ধারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে বামনাকে মুক্ত করার জন্য থানা ভবনে আক্রমণ করলে থানার অভ্যন্তর থেকে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী প্রচন্ডভাবে তাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু অদম্য মুক্তিযোদ্ধারা থানার উত্তর দিকে আকনবাড়ির বাগান ও দক্ষিণ দিকে সারওয়ারজান হাইস্কুল ও পশ্চিমে সদর মসজিদের চারদিকে একটি বেষ্টনী বলয় গড়ে থানাকে লক্ষ্য করে তুমুল গুলি চালাতে থাকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নায়েক আমীর হোসেন থানা ভবনের দিকে কয়েকটি গ্রেনেড ছুড়ে মারলে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এর কিছুক্ষণ পরই তারা অদম্য শক্তির কাছে পিছু হটতে বাধ্য হয় ও আত্মসমর্পণ করে। কয়েকজন রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা এ যুদ্ধে নিহত হয়। ওই দিনই বামনা থানার পতাকা স্ট্যান্ডে উল্লাসিত মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করে বিজয় উল্লাস করে বামনা শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে উপকুলীয় দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল নবম সেক্টরের অধীনে সংগঠিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উপকুলীয় এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন কেন্দ্র নবম সেক্টরের সাব সেক্টর হেড কোয়াটার বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়ায়। বুকাবুনিয়ায় নির্মাণ করা হয়েছ দৃষ্ঠিনন্দন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ।
বামনা থানা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বামনা উপজেলা প্রশাসন, মুত্তিযোদ্ধা সংসদ, বামনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে আজ বুধবার সকালে বর্নাঢ্য র্যালি, স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ বীর মুক্তযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ দিনটি বামনা উপজেলাবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন। তাই দিনটির তাৎপর্য সকলের কাছে তুলে ধরতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। -বাসস