কিশোরগঞ্জে এক ইতালি প্রবাসীকে খুন করেছেন তাসলিমা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধূ।
মো. আমিনুল আলম (৪৫) নামের ওই ইতালি প্রবাসীকে মেরে নিজের ভাড়া বাসায় তালাবন্দি অবস্থায় ফেলে রেখে থানায় আত্মসমর্পণ করেন ওই গৃহবধূ। পরে সংকটাপন্ন ওই প্রবাসীকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে কয়েক ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম সংলগ্ন প্রফেসর খায়রুল আলম সবুজের বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আমিনুল আলম নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম এলাকার মৃত আব্দুছ ছামাদের ছেলে। তিনি ২ মাস ৪ দিন আগে ছুটিতে ইতালি থেকে দেশে ফেরেন। আগামী ২রা জানুয়ারি তার ইতালি পাড়ি দেয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার জেলার হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামের নাজমুল আলমের স্ত্রী। মো. নাজমুল আলম কিশোরগঞ্জ সদরে গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত থাকায় স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জেলা শহরের নীলগঞ্জ রোডের শোলাকিয়া সেবাশ্রম সংলগ্ন প্রভাষক মো. খায়রুল কবীর ভূঞা সবুজের বাসায় ভাড়া থাকেন। এদিকে, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গৃহবধূ তাসলিমা আক্তারের স্বামী মো. নাজমুল আলমকে পুলিশ আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে জানান, ইতালি প্রবাসী মো. আমিনুল আলমের বাসায় তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। বাসার মালিক আমিনুল আলমের চরিত্র ভালো না থাকায় সে বাসা ছেড়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে একই এলাকায় প্রভাষক মো. খায়রুল কবীর ভূঞা সবুজের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন। পূর্বের ভাড়া বাসার মালিক হিসেবে পরিচয়ের সূত্র ধরে আমিনুল আলম গৃহবধূ তাসলিমাকে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাবসহ বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলতো। তাসলিমা ও তার স্বামী নাজমুল আলম বিষয়টি আমিনুল আলমের স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনকে জানালে আমিনুল আলম ক্ষিপ্ত হন।
গত শুক্রবার বিকালে স্ত্রী-সন্তানদের ভাড়া বাসায় রেখে নাজমুল আলম গ্রামের বাড়ি হোসেনপুরে যান। এ সুযোগে রাত পৌনে ১১টার দিকে আমিনুল আলম গৃহবধূর ভাড়া বাসায় গিয়ে ওই গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তাকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালান। তাসলিমা আক্তার তখন নিজেকে বাঁচাতে হাতের কাছে থাকা পাথরের শিল দিয়ে আমিনুল আলমের মাথায় উপর্যপুরি আঘাত করেন। এতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমিনুল মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে মুমূর্ষু অবস্থায় আমিনুলকে সেখানে ফেলে রেখে তাসলিমা থানায় ছুটে গিয়ে পুলিশকে ঘটনার বিবরণ দেন।
গৃহবধূ তাসলিমা আক্তারের কাছ থেকে এমন বিবরণ পেয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী মো. মাহফুজ হাসান সিদ্দিকী ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে বাসাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে তালা ভেঙে আমিনুল আলমকে মুমূর্ষু অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পুলিশ কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আমিনুল আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে গতকাল ভোর ৫টার দিকে আমিনুল আলমের মৃত্যু হয়।
এদিকে, নিহত আমিনুল আলমের স্ত্রী সোমা আলম জানান, তিন বছর আগে তাসলিমা আক্তার সপরিবারে তাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তখন তারা ২-৩ মাস ভাড়া থাকার পর বাসা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত শুক্রবার রাতে টুকটাক কেনাকাটার জন্য তার স্বামী আমিনুল আলম বাসার বাইরে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগে রাস্তা থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা পাথরের শিলটি উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার নিবিড় তদন্ত চলছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।