কয়েক দিন থেকে টক অব দ্য কান্ট্রি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিক কথাবার্তা, এক নায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি, মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ, দল থেকে বহিষ্কার ইত্যাদি খবর গণমাধ্যম ও নেট দুনিয়া দখল করে রেখেছিল। মাঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে’ বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়।
অতপর গণধিকৃত মুরাদ হাসানের কানাডা চলে যাওয়ার জন্য মুখ ঢেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ, কানাডায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার খবর গণমাধ্যম, নেট দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এর মধ্যেই বিনা মেঘে বর্জ্রপাতের মতো খবর আসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খবর। মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাবের এ কর্মকর্তাদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সে দেশে এদের কারো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ খবর নেট দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলছে। জো বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ বাংলাদেশের জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে অবিহিত করেছেন।
গতকাল ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটা নতুন ঢং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অতিরঞ্জিত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব এবং বাহিনীটির বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাব ৭ কর্মকর্তার আমেরিকা প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ মনে না করায় আমেরিকার গণতান্ত্রিক সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাবের ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিবৃতি অনুসারে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় প্রথমে রয়েছেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়াও রয়েছেন- র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান। পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বেনজীরের পাশাপাশি র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের নাম উল্লেখ করা হয়।
র্যাবের এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তোলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে র্যাবের যে কার্যক্রম, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ও গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ রয়েছে। এ মানবাধিকার লংঘন ও আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিকে হুমকির মুখে ফেলছে।
মার্কিন দফতরটি উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে র্যাব ২০০৪ সালে গঠিত হয়। এর সদস্য হন পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে আসা সদস্যরা। বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বরাত দিয়ে বলা হয়, র্যাবের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০০টির বেশি গুম, ২০১৮ সাল থেকে ৬০০ জনকে বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। কিছু প্রতিবেদন বলছে, এসব ঘটনা বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের ওপরও ঘটানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা কর্মকর্তাদের কারও নামে কিংবা কোনো মার্কিন নাগরিকের জিম্মায় কোনো সম্পদ থেকে থাকলে তা জব্দ করা হবে। বিষয়টি অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলকে (ওএফএসি) অবহিত করতে হবে। ওএফএসির বিশেষ অনুমতি বা অন্য কোনো ছাড় না থাকলে মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের জন্য চিহ্নিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই ছিল। ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে সম্পৃক্ততার জন্য এ দুজনের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ দফতর সরকারের এক নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) আওতায় এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ আদেশে মানবাধিকার লংঘন বা দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তির সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন রাজস্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবকে একটি বিদেশি সংস্থা হিসেবে বাইডেন সরকারের নির্বাহী আদেশের (নম্বর ১৩৮১৮) অধীনে রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে র্যাবও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। আর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মার্কিন রাজস্ব বিভাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করা খান মোহাম্মদ আজাদ গত ১৬ মার্চ থেকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার ২০১৯ সালের ২৭ জুন থেকে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো. জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) ছিলেন। আর মো. আনোয়ার লতিফ খান ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) পদে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব : ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অতপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটা নতুন ঢং। যে কোনো অভিযোগ তথ্যভিত্তিক হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬ লাখ লোক নিখোঁজ হয়। তাদের মতো পরিপক্ব গণতন্ত্রের দেশ থেকে এটা কাম্য নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক একজন ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করা হয়। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
মূলত সচিব মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে র্যাব এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে ঢাকা অসন্তুষ্ট। এ অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিতে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে তলব করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের অসন্তোষের কথা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আগেভাগে কোনো শলাপরামর্শ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য যে ইস্যু উত্থাপন করা হয়েছে তা সক্রিয় আলোচনার বিষয়। বিশেষ করে দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র আগে কোনোভাবে অবহিত না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সন্ত্রাস, মাদক পাচার এবং অন্যান্য বহুজাতিক জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনে থাকা সরকারি একটি এজেন্সির মর্যাদা খর্ব করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সুনির্দিষ্ট যেসব ইস্যুতে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব বিষয় শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, বহুবার বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মেকানিজমের অনেকের কাছে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে শ‚ন্য সহনশীলতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশে ইউনিফর্ম পরা সেবা খাতগুলোতে এর কোনো সদস্য অন্যায় করলে সেই অন্যায়ের আইনগত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম আছে। এক্ষেত্রে র্যাব ব্যতিক্রম নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, র্যাবসহ বাংলাদেশের কোনো সংস্থা মানবাধিকার লংঘন করে না। অতিরঞ্জিত সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব এবং বাহিনীটির বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার বুড়িগঙ্গা হলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের প্রতিটি অভিযোগ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত হয়। কোনো সংস্থা মানবাধিকার লংঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং। মাদক কারবারিরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। দেশের প্রশিক্ষিত বাহিনী অভিযান চালালে তারা অস্ত্র ব্যবহার করায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। আমাদের কোনো সংস্থা মানবাধিকার লংঘন করে না। করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
র্যাব মানবাধিকারের দৃষ্টান্ত : র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেছেন, র্যাব মানবিকতার যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বিশ্বের কোনও বাহিনীর তা নেই। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। তিনি বলেন, মাত্র ৯ হাজার ফোর্সের র্যাব জঙ্গি ও দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে যে মানবিকতা দেখিয়েছে পৃথিবীতে অন্য কোনো বাহিনীর এমন নজির নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের অফিসারসহ ২৮ জন প্রাণ দিয়েছেন, এক হাজারের মতো সদস্য পঙ্গু হয়েছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভবিষ্যতেও র্যাব জীবন দিয়ে কাজ করবে।
র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসিয়ালি আমরা কোনও চিঠি পাইনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা বলতে চাই, র্যাব কখনও মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, রক্ষা করেছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন হয়েছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। সুন্দরবনের ৩৬টি দস্যু বাহিনীর ৩২৬ জন দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের সুস্থ জীবন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেছে, তারাও সুস্থ জীবনে ফিরেছে। জঙ্গি ও দস্যুসহ ৪২১ জনকে র্যাব সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে এনেছে। আমার জানা নেই বিশ্বে আর কোনও বাহিনী আছে কি-না যারা এমন মানবিকতা দেখিয়েছে।
ক্রসফায়ারের বিষয়ে র্যাবের এ পরিচালক বলেন, বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে গুলি বিনিময়ের অভিযোগ করা হয়। আপনারা জানেন, রাষ্ট্রের আইনে প্রতিটি নাগরিকের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন অভিযানে যায়, তখন সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি বিনিময়ের অধিকার রাষ্ট্রের আইন আমাদের দিয়েছে। মাদক, জঙ্গি দমনের অভিযানে আমরা যখন প্রতিরোধের মুখে পরেছি, তখনই গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। র্যাব আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে। ক্রসফায়ারের প্রতিটি ঘটনার স্বাধীনভাবে তদন্ত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি গুলি বিনিময়ের ঘটনা নির্বাহী তদন্ত হয়। তারা দেখে গুলি বিনিময় যথাযথ ছিল কি-না। যারা আইন ভঙ্গ করে, নিয়ম ভঙ্গ করে, তাদের বিরুদ্ধে র্যাব সবসময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।