পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে নাসিম হোসেন (২০) নামের এইচএসসির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চরতারাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রবিউল হক টুটুলসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনুজ্জামান এ আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত নাসিম হোসেন পাবনা সদর উপজেলার আটঘরিয়াপাড়া গ্রামের নবাব আলীর ছেলে এবং দুবলিয়া হাজী জসিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী।
শনিবার সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিহত হওয়ার মাত্র দুই দিন পর পাশের ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চরতারাপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) আনারস মার্কা প্রতীকের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান খানের সমর্থকরা সোমবার সন্ধ্যায় তারাবাড়িয়া এলাকায় প্রচারণায় বের হন। এ সময় পাশের সুজানগর পৌর এলাকা ও সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রবিউল হক টুটুলের সমর্থকরাও নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে উভয়পক্ষ তারারবাড়িয়া বাজারে মুখোমুখি হলে ধাওয়া-পাল্টা ও সংষর্ষ শুরু হয়।
এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো এবং গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সংঘর্ষ দেখে নিজের মোবাইলে তা ভিডিও করতে থাকে নাসিম হোসেন। এ সময় সংঘর্ষে নাসিম নিহত হয়।
উভয়পক্ষই দাবি করেন নিহত নাসিম তাদের সমর্থক। তবে নিহত নাসিমের পরিবারের দাবি সে কোনো প্রার্থীর সমর্থক ছিল না। সে শুধুই একজন ছাত্র এবং নিরীহ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নিহত নাসিম তার সমর্থক। ভিডিও করতে দেখে নৌকা প্রতীকের সমর্থিতরা ককটেল ও গুলি করলে নাসিম নিহত হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহত একজনকে আশঙ্কজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। বাজার করতে আসা নাসিম নামে এক তরুণ তখন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিল। এ সময় পেছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে।
সন্ধ্যা ৭টায় ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে থাকা পাবনা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিহত ছেলেটি নিরীহ। সে কোনো পক্ষের নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
ওসি আরও বলেন, নাসিম ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি।