রাজধানীর বনানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলাকে (২৬) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার ও সহপাঠীরা।
তার শরীরের একাধিক স্থানে জখমের দাগ রয়েছে। ইলমার পরিবার ও বন্ধুরা বলছেন, স্বামীর নির্যাতনেই মৃত্যু হয়েছে এ তরুণীর। এ ঘটনায় তার স্বামী ইফতেখারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ইলমার লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে।
ইলমার খালু ইকবাল হোসেন জানান, ইলমা ঢাকার ধামরাই উপজেলার সাইফুল ইসলামের মেয়ে। কানাডা প্রবাসী স্বামী ইফতেখারকে নিয়ে বনানীর একটি বাসায় থাকতেন। পাঁচ দিন আগে তার স্বামী কানাডা থেকে ঢাকার বাসায় আসেন। মঙ্গলবার ইলমা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
ইকবালের অভিযোগ তার ভাগ্নিকে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে মেরে ফেলেছে। তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায়ও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ইলমা আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে ইলমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ঢামেক মর্গে ছুটে আসেন সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
সহপাঠী মজিদা নাসরিন মম বলেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হলে ছিল ইলমা। বিয়ের পর থেকে বনানীতে শ্বশুরবাড়িতে থাকত। শুনেছি বিয়ের পর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইলমা। আমরা ইলমার শরীরে আঘাত দেখেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, ইলমার লাশ মঙ্গলবার বনানী থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ইলমার বাবা সাইফুলের অভিযোগ, ইলমার নাকে, ওপরের ঠোঁটে, পিঠের ডান পাশে, বাঁ কানসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন পেয়েছে তিনি।
এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া। বুধবার দুপুরে তিনি টেলিফোনে বলেন, ইলমাকে খুনের অভিযোগে গতরাতে মামলা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন— ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীন (৩৬) এবং ইলমার শ্বশুর ও শাশুড়ি।
ওসি জানান, গতকাল আটক ইলমার স্বামীকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি দুই আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নিহত ইলমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্রী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিলে ইলমার সঙ্গে ইফতেখারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইফতেখার ও তার মা-বাবা ইলামাকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে বলেন। ইলমা পড়া বন্ধ করতে না চাওয়ায় ইফতেখার ও তার মা-বাবা মিলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে তার মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। বিয়ের তিন মাস পর ইফতেখার কানাডায় চলে যান। ১২ ডিসেম্বর তিনি ফিরে আসেন। মঙ্গলবার সাইফুল চৌধুরীর স্ত্রীর মুঠোফোনে কল করে ইফতেখার জানান, তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তাদের আসতে বলেন তিনি।
সাইফুল চৌধুরী হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখেন।