দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ের ধারা বজায় রাখল তৃণমূল কংগ্রেস।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪টিতে জয় পেয়েছে তৃণমূল শিবির। কার্যত বিরোধী দলশূন্য এই নির্বাচন সম্পূর্ণ তৃণমূলের পক্ষেই গেল।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়, কলকাতা পৌর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের খবরে কালীঘাটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন।
সেখানে শুরু হয় আবির খেলা ও মিষ্টি বিতরণ। দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আসেন। এ সময় তারা উৎসবে মেতে উঠে এক অকাল দোল উৎসব পালন করেন। মুখে তাদের শ্লোগান ‘এবার খেলা হবে দিল্লিতে। ’ অর্থাৎ ২০২৪ ভারতে যে লোকসভা নির্বাচন হবে তাতে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই জয় মানুষের জয়। কলকাতাকে আরও সুন্দর ও উন্নত করতে কাজ করতে হবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় যে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল; সেখানে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে মোট ৯৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সম্পূর্ণ ভোট হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। কলকাতার মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৭ জন। ১৪৪ ওয়ার্ডে চার হাজার ৯৫৯টি বুথে ভোট নেওয়া হয়। তাতে কলকাতা থাকল মমতার তৃণমূলের দখলেই।
ভোটের ফলে এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বিজেপিসহ অন্যরা। তৃণমূল কংগ্রেসের ১৩৪টির বিপরীতে বিজেপির জয় মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে। এছাড়া কংগ্রেস দুই, বামফ্রন্ট দুই এবং অন্যরা তিনটিতে জয়লাভ করেছে।
নির্বাচনের এমন ফল সামনে আসার পরপরই বিজেপিসহ অন্য বিরোধীরা অভিযোগ করেছে; এবারের নির্বাচনে ভোট লুট করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো হয়েছে।
যদিও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। মানুষ বিরোধীদের ভোট দেয়নি।
এ দিকে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন দুজন করে ডিসি। কিন্তু দুএকটি গণনাকেন্দ্রে আরও একজন অতিরিক্ত ডিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবার গণনা কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থাও ছিল। একই সঙ্গে করা হয়েছিল ভিডিয়ো গ্রাফিও। এমনকি ড্রোন ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে নজরদারিও চালিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
অপর দিকে ফলাফল ঘোষণার পর কোনো ধরনের বিজয় মিছিল বের করা যাবে না বলে এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এমনকি ভোটে সহিংসতা ও বাধা দেওয়ার যেসব অভিযোগ বিরোধীরা এনেছেন নির্বাচন কমিশন তা মানতে নারাজ। কমিশনের দাবি, কোথাও ভোটে বাধা দেওয়া হয়নি, ভোট বন্ধও হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে প্রথম কলকাতা সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর ২০১১ সালে বাংলার মসনদ দখল করে তারা, প্রথম পশ্চিমবাংলার নারী মুখ্যমন্ত্রী হন দিদি (মমতা)। এরপর ২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১৪টিতে জয় পায় তৃণমূল শিবির। সেবার বামেরা জয় পেয়েছিল ১৫টি ওয়ার্ডে, বিজেপি ৭টিতে, কংগ্রেস ৫টিতে এবং বাকি ৩টিতে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ফলে ২০১০, ২০১৫ ও ২০২১ টানা তিনবার কলকাতা থাকল মমতার আঁচল তলে!