মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া, মালি এবং গিনির শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল শনিবার ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (এজিওএ) থেকে তিনটি দেশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে এজিওএ আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, উত্তর ইথিওপিয়ায় ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে ইথিওপিয়া সরকার এবং অন্যান্য পক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে গিনি এবং মালি উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ সরকার কাঠামোতে অসাংবিধানিক পরিবর্তন এনেছে। এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
আল জাজিরার পক্ষ থেকে এ তিনটি আফ্রিকান দেশের ওয়াশিংটন দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
এজিওএ বাণিজ্য আইন সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেয়। এর জন্য যোগ্যতার শর্ত বেঁধে দেওয়া আছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- মার্কিন বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের বাধা দূর করা এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের দিকে অগ্রগতি।
২০২০ সালে আফ্রিকার ৩৮টি দেশ এজিওএ-এর জন্য যোগ্য ছিল।
শনিবারের বিবৃতিতে ইউএসটিআর বলেছে, ইথিওপিয়া, মালি এবং গিনি এখনো চুক্তিতে ফিরে আসতে পারে যদি তারা আইনের বিধানগুলো (শর্ত) পূরণ করে।
অবশ্য গত নভেম্বরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশের উত্তরাঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইথিওপিয়াকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
২০২০ সালের নভেম্বরে ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলে স্থানীয় নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আবি সরকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গড়ায়। ১৩ মাস ধরে চলা সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শুধু তাইগ্রেতেই প্রায় ৪ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।
এই সংঘাত পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলেছে। কয়েক হাজার শরণার্থী সুদানে আশ্রয় নিয়েছে। ইথিওপীয় সেনাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সোমালিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সেনাবাহিনীকে এ সংঘাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইথিওপিয়ার বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্ত দেশটির টেক্সটাইল শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলবে। বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এ দেশের টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম ক্রেতা।
চলমান সংঘাত, করোনাভাইরাস মহামারি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে মার্কিন সিদ্ধান্ত ইথিওপিয়ার বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।