পিরোজপুর থেকে অন্যত্র কালোবাজারে পাচার হয়ে যাচ্ছে চাল, গমসহ খাদ্যশষ্য। শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করে একটি চক্র বিভিন্ন সময়ে কালোবাজারে পাচার করছে এসব সরকারী খাদ্যশষ্য। আর এর সাথে কিছু সরকারী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালোবাজারে বিক্রির জন্য পাচারকালে গত রবিবার রাতে ৩২ মেট্রিক টন সরকারি গম আটক করে পিরোজপুরের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। পিরোজপুর পৌরসভার মুক্তারকাঠী বাইপাস সড়ক এলাকা থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে গমগুলো আটক করা হয়।
পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে আটক দুটি ট্রাকে বোঝাইকৃত সরকারী গম জব্দ করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনস এ রাখা হয়। তবে আটকের সময় উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন শৃংখলা কর্তৃপক্ষকে বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে নি গমের মালিক দাবীকারীরা।
জানা গেছে, উক্ত সরকারী গম পিরোজপুর থেকে খুলনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তাও আবার পিরোজপুর-খুলনা সড়ক না হয়ে নাজিরপুরের উপর দিয়ে খুলনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এদিকে, গম আটকের পরদিন সোমবার বিকেলে কাগজপত্র দেখিয়ে আটক গম ছাড়িয়ে নেন খুলনার আটা তৈরীকারী একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বলা হয়, উক্ত ৩২ টন গম পিরোজপুর পুলিশের রেশনের জন্য বরাদ্ধ ছিল। খুলনার উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে গম দিয়ে তাদের কাছ থেকে আটা নেওয়া হয় পুলিশের জন্য।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল ইমরান খান জানান, গম আটকের সময় কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারলেও পরে তারা গমের কাগজপত্র দেখিয়েছে। গমগুলো খুলনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং তা পুলিশের রেশনের জন্য বরাদ্ধ করা। গম নিয়ে পুলিশের জন্য আটা সরবরাহ করা হয়।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের রেশনের গমের কথা বলা হলেও বিষয়টি নিয়ে নানা রহস্য রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, উক্ত গমের যে, কাগজপত্র দেখানো হয়েছে তা কয়েকমাস আগের। পিরোজপুর পুলিশের রেশনের জন্য পিরোজপুর খাদ্য গুদাম থেকে গত বছরের আগষ্ট, সেপ্টেম্বর মাসের ডিও দেখানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে সে সময়ে গুদাম থেকে গম বের করার নেওয়ার চালান রয়েছে। ৪/৫ মাস আগের গম তো এখনও থাকার কথা না। তবে তিনি বলেন, পূর্বের গমগুলো মজুদ করে একসাথে কালোবাজারে পাচার করা হচ্ছিল। আর এর সাথে পিরোজপুর খাদ্য বিভাগের লোকজনও জড়িত রয়েছে।
এদিকে, অপর একটি সূত্র জানায়, পিরোজপুর খাদ্য গুদাম থেকেই গমগুলো বের হয়েছে। একটি চক্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ধকৃত চাল, গম ক্রয় করে তা সরকারী খাদ্য গুদামের মধ্যেই মজুদ করে রাখে। পরে সুবিধামতো সময়ে তা অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হয়। আর এসব কাজে খাদ্য বিভাগসহ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে।
অভিজ্ঞ মহলের ধারণা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিরোজপুর থেকে এসব খাদ্যশষ্য অন্য জেলাতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ওএমএস এর চাল, আটাও এভাবে কালো বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তারা কালো বাজারী রোধে সরকারের জোড়ালো পদক্ষেপ দাবী করেছেন। একইসাথে তারা পুলিশ বা অন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর রেশনের জন্য গমের বদলে সরাসরি আটা দেওয়ারও দাবী জানান।